...গত ২৪শে এপ্রিল, ২০১৩ সকালে সাভারে ভবন ধ্বসের যে ঘটনা ঘটেছে সেটার সাথে ৩ মে, ১৮৮৬ সালের শিকাগোর হে-মার্কেটের ঘটনার চিত্রের কোন মিল নেই, কিন্তু চরিত্র সম্ভবত এক, উপলক্ষ সেই একই। পহেলা মে’র আগেই আমরা জ্বলন্ত একটা পহেলা মে’র দেখা পেলাম। কিছু লোভী মানুষের কারণে এটা আগে ঘটেছে আর এখনো ঘটছে। আর কিছু লোভী মানুষ এটা থেকে নিজেদের ফয়দা লোটার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে- তারা ধ্বংশ হোক।
তবে তারাই সব নয়, অনেক নির্লোভী মানুষ আছেন যাঁরা নিজের লাভের কথা না ভেবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, কষ্ট স্বীকার করেছেন- আল্লাহ তাদের দীর্ঘজীবী করুন।
শয়তানদের কারণে মারাগেছে সম্ভবত ৪০৫ জন। আর সুভবুদ্ধির মানুষের হাতে বেঁচেছে উদ্ধার প্রাপ্ত ২৪৪৪ জন।
খেটে খাওয়া মানুষ হচ্ছে রাষ্ট্রের সম্পদ, রাষ্ট্রের সম্পদ যারা নষ্ট করে তারা হচ্ছে রাষ্ট্রবিরোধী, আর আমাদের সংবিধানে তাদের সাজার কথা নিশ্চয় লেখা আছে। আমরা চাই তাদের আর তাদের সহযোগীদের সেই সাজা হোক, সে তারা যেই হোক না কেন।
গভীর সমবেদনা আর শয়তানদের প্রতি ঘৃণা জানিয়ে আমি যেটা লেখা শুরু করেছিলাম সেটাতে ফিরে যাচ্ছি।
মে ডে (১লা মে) সারা বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য আর রাজনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করার জন্য এটা উৎযাপন করা হয়ে থাকে।
ইতিহাস- পহেলা মে প্রকৃত পক্ষে ইউরোপের ভিন্ন ধর্ম মতালম্বিদের গ্রীষ্মকে আমন্ত্রণ জানানোর উৎসব হিসাবে চালু ছিল। এটা তাদের কাছে উর্বরতার দিনের উৎসব হিসাবে পরিচিত ছিল- বসন্তকালিন চারা রোপন আর মুক্তযৌন মিলন- উভয় দিক দিয়েই। একটা নক্সা করা কাঠের দন্ড স্থাপন করা হত। পরুষ আর মহিলারা সেটাকে ঘিরে নাচত আর নিজের জুড়ি নির্বাচনের জন্য ফিতা দোলাতো- জুড়িটা এক রাতের জন্য হলেও। পুরাতন কেল্ট আর স্যাক্সনরা এটাকে সূর্যের দেবতার সম্মানে ‘আগুনের’ দিন হিসাবে পালন করত। তারা এটা শুরু করত মধ্যরাত্রে, আর এটা খুব শীঘ্রই তথাকথিত ডাইনিদের রাত্রি হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠল।
মে ডে’র ডাইনিদের অবৈধ সাজাদানের কাজকর্ম ১৬০০র দিকে শুরু হয়েছিল। ১৬৪৪এ বৃটিশ পার্লামেন্ট এটাকে অনৈতিক হিসাবে বেআইনি ঘোষনা করে আর চার্চগুলোকে এর বিরুদ্ধে নিজেদের পূর্ণ শক্তি প্রয়োগের জন্য বলে। কিন্তু ইউরোপের বেশীর ভাগ সরকার এটা প্রতিরোধ করতে বিফল হয়। চার্চ আলাদা একটা দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে আর এই হিংস্র উৎসবের প্রকৃতি বদলে দেওয়ার জন্য পহেলা মে’কে সাধুদের দিন হিসাবে প্রচার করতে থাকে। কিন্তু এই চেষ্টা কোন কোন স্থানে ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে। ইউরোপের বেশীরভাগ কৃষি প্রধান অঞ্চলে সেই হিংস্র প্র্রথা রাষ্ট্র বা ধর্মীয় প্রটিষ্ঠানের চেয়েও বেশী শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে। সেটা একটা উৎসবের আকারে বেড়ে উঠতে থাকে। বিশেষ করে রাত্রে বিশাল আকারের ভোজ, গান, নাচ আর মুক্ত দেহভোগের আকারে এটা অভ্যাসে পরিণত হয়।
সমাজতন্ত্রের বিপ্লবের পরে উৎসবের মূল এবং নীতি বিভিন্ন দিকে বিস্তার লাভ করে টিকে থাকতে সমর্থ হয়। সারা ইউরোপে শ্রমিকদের পহেলা মে উৎযাপনের মাধ্যমে বেশীরভাগ পৌরাণিক ও ধর্মীয় অনুভূতি থেকে সরে যেতে শুরু করে, কিন্তু উৎসবের স্পীহা- প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা আর একে অপরের প্রতি অবাধ যৌন ভোগের স্পীহা আরো শক্তি লাভ করতে থাকে।
হে মার্কেট হত্যা যজ্ঞঃ ১৮৮৪তে ইউ এস ফেডারেশন অফ অরগানাইজড ট্রেড এন্ড লেবার ইউনিয়ন একটা আইনের ঘোষণা দেয় যে, মে ১, ১৯৮৬ হতে আমেরিকার সমস্ত শ্রমিকদের জন্য ৮ ঘণ্টা হচ্ছে আইনসম্মত এক দিনের পূর্ণ কর্ম দিবস। শাসক শ্রেণীর সেটা বুঝে মেনে নেওয়ার যথেষ্ট সময় পায়।
কিন্তু মালিক পক্ষ সেটা প্রত্যাখান করল।
মে ১, ১৮৮৬ সারা দেশে শ্রমিক শ্রেণী একটা সাধারণ ধর্মঘট ডাকে। এতে সারা দেশে ৩,৫০,০০০ এর বেশী শ্রমিক সরাসরি অংশ নেয়। তারা হাজারে হাজারে নিজেদের সাধ্যমত পদযাত্রা শুরু করে। পরে এটাকে হে- মার্কেট রায়ট নাম দেওয়া হয়। এই ধর্মঘট চলার সময় মে ৩ তারিখে শিকাগোতে- যে স্থানটা ছিল আমেরিকার শ্রমিক আন্দোলনের প্রাণ কেন্দ্র- পুলিশ নিরস্ত্র ম্যাক-করমিক রিপার ওয়ার্কসের শ্রমিক ধর্মঘটীদের উপরে গুলি চালায়। এতে ছয়জন শ্রমিক নিহত আর অসংখ্য আহত হয়। সরকার আর পুলিশের বিরুদ্ধে সারা দেশে গর্জন শুরু হয়। শ্রমিকদের উপরে পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর পদযাত্রা শুরু হয় আর এর প্রতিবাদে একটা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মে ৪ তারিখে শিকাগোর ইন্টারন্যাশানাল ওয়ার্কিং পিপলস এসোসিয়েশনের (আই ডব্লু পি এ) সদস্যরা দক্ষিণ অঞ্চলের ধর্মঘটী শ্রমিকদের উপরে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে হে-মার্কেট স্কয়ারে কয়েক হাজার মানুষের একটা সভা করে। সেদিন সেখানে বর্ষার ভিতরে যখন শেষ বক্তা তার বক্তব্য শেষ করছিল তখন মাত্র ২০০ জনেরমত আত্মত্যাগী মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিল। এই সময়ে ১৮০ জনেরমত একটা পুলিশ বাহিনী সেখানে এসে উপস্থিত হয়। তারা শ্রমিকদেরকে সরে যেতে বলে। তখন হঠাৎ করে পুলিশদের ভিতরে একটা বোমা বিষ্ফোরিত হয়, যাতে করে ৭ জন পুলিশ সেখানে মারা যায়। পুলিশ সাথে সাথেই নিরস্ত্র শ্রমিকদের উপরে গুলি ছুড়তে শুরু করে। সেখানে তখন কতজন শ্রমিক হত বা আহত হয়েছিল আজ পর্যন্ত সেটা জানা সম্ভব হয়নি। সেখানে আটজনকে দাঙ্গা সৃষ্টি এবং হত্যাকারী হিসাবে গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তী দিনগুলোতে সরকারের আঘাতের বদলে আঘাত করার নীতি প্রচন্ড হয়ে ওঠে। প্রতিটা সংবাদপত্রের মাধ্যমে সরকার এদের উপরে এমন ভাবে দোষারোপ করতে থাকে যে, সরকারের অতীত হত্যা যজ্ঞ আর হিংস্রতা আড়ালে পড়ে যায়।
এই আটজন শ্রমিককে সরকার বিরোধী, দাঙ্গা সৃষ্টি এবং হত্যাকারী হিসাবে দোষী সব্যস্ত করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই আটজনের ভিতরে মাত্র একজন সেখানে উপস্থিত ছিল, আর সে তখন মানুষদেরকে কিছু বলার চেষ্টা করছিল। শ্রমিকশ্রেণীর বিপ্লবের ইতিহাসে দেখানো সেরা বিচারের কাজগুলোর এই একটাতে অভিযুক্তদের দোষ প্রমাণের জন্য একটাও প্রমাণ উপস্থিত করা হয়নি। এদের মধ্যে চারজন- এলবারট পারসন্স, আগষ্ট স্পাইস, জর্জ এঙ্গেলস আর এডলফ ফিসার- এদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। লুইস ল্যাং আত্মহত্যা করে। আর ১৮৯৩ সালের শ্রমিক শ্রেণীর বিশাল উত্থানের কারণে বাকি তিনজনকে মুক্তি দেওয়া হয়।
মে ১, ১৮৯০ দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক প্যারিস কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত (জুলাই, ১৮৮৯) মোতাবেক হে-মার্কেট শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য সারা আমেরিকা আর ইউরোপ জুড়ে বিশাল বিক্ষোভ প্রদর্শন আর ধর্মঘট অনুষ্টিত হয়। শ্রমিকরা তাদের আট ঘণ্টা কর্ম দিবস আর স্বাস্থ্যকর পরিবেশের দাবি তুলে ধরে। আইডব্লুপিএ আরো কিছু দাবি পেশ করে। এখানেই লাল পতাকার সৃষ্টি হয়- যে প্রতীকটা আমাদেরকে যে শ্রমিকরা পূঁজিবাদের এলাকায় নিজেদের রক্ত ঝরিয়েছে আর ঝরিয়ে চলেছে তার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
সেই দিন থেকে পরের দিনগুলিতে (১৮৯১ সালে রাশিয়ায় শুরু, তারপরে ১৯২০এ চীনে আর ১৯২৭এ ভারতে) সারা বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণী ১ মে’কে একটা আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী ঐক্য আর নিজেদের রাজনৈতিক মুক্তি দিবস হিসাবে উৎযাপন করে থাকে। পূঁজিবাদী রাষ্ট্রের বিরোধীতা ও ধ্বংস সাধনহীন অবস্থায় স্বাধীনতার জন্য লড়াই আর নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষের প্রতীক হিসাবে এটা পালন করা হয়ে থাকে। ইন্টারনেট অবলম্বনে। এপ্রিল ২৯, ২০১৩।
Let the wind slift your banners from far lands
With a massage of strife and of hope:
Raise the Maypole aloft with it’s garlands
That gathers your cause in its scope…
Stand fast, then, oh workers, your ground,
Together pull, strong and united:
Like your hands like a chain the world round,
If you will your hope be requilted.
When the world’s workers, sister and brothers,
Shall build, in the new coming years,
A lair house of life not for-others,
For the earth and its fulness is there.
Walter Crane- The Workers Maypole -1894.
০৪ জুলাই - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৫৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪